রোগ নিরাময়ে সুন্নতি মধুর গুণাগুণঃ


রোগ নিরাময়ের জন্য মধু কখনো এককভাবে, আবার কখনো ভেষজ দ্রব্যের সঙ্গে মিশ্রিত করে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় সফলতার সঙ্গে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম্নে কয়েকটি রোগের চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার উল্লেখ করা হলো-


১.সর্দি, কাশি ও স্বরভঙ্গে

চায়ের সঙ্গে সুন্নতি মধু ও সুন্নতি আদার রস মিশিয়ে খেলে সর্দি ও শ্লেষ্মা রেগের উপশম হয় (১ চামচ সুন্নতি  মধু + ১ চামচ সুন্নতি আদার রস)।


২.দুই চা চামচের সমপরিমাণ সুন্নতি মধু ও বাসকপাতার রস মিশিয়ে খেলে সর্দি ও কাশি সেরে যায়।


৩.সুন্নতি তুলসী পাতার এক চা চামচ রস ও সমপরিমাণ সুন্নতি  মধু মিশিয়ে খেলে অল্প সময়ের মধ্যেই কাশি দূর হয়।


৪.সৈন্ধব লবণ, আমলকী, পিপুল, মরিচ ইত্যাদির সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে এক চা চামচ করে খেলে কফ ও স্বরভাঙ্গা ভালো হয়।


৫.খাঁটি সুন্নতি  মধুর সঙ্গে হরীতকী ও বচচূর্ণ মিশিয়ে লেহন করলে (চেটে খেলে) শ্বাসকষ্টের আশু উপকার পাওয়া যায়।


৬.দুই চা চামচ সুন্নতি মধু ১ গ্লাস গরম সুন্নতি দুধের সঙ্গে সকালে ও সন্ধ্যায় খেলে সর্দিকাশি দূর হয়।


৭.হালকা গরম পানিসহ সুন্নতি  মধু মিশিয়ে গড়গড়া করলে ক্বাসিদা শরীফ পাঠকের গলার স্বর বৃদ্ধি পায়। অনেকের মতে, এটা টনিকের মতো কাজ করে।


৮.এক চা চামচ সুন্নতি আদার রস এবং এক চা চামচ সুন্নতি  মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও সন্ধেবেলা খেলে সর্দি সেরে যায় ও খিদে বৃদ্ধিপায়।


৯.আমাশয়ে সুন্নতি মধু

রক্ত মিশ্রিত পায়খানা, তৈলাক্ত পায়খানা এবং সঙ্গে পেট কামড়ানি থাকলে তাকে আমাশয় বলে। সুন্নতি  মধু দিয়ে কিভাবে আমাশয় রোগ নিরাময় করা যায় তা তুলে ধরছি-


কচি বেল ও আমগাছের কচি চামড়া (বাকল) বাটার সঙ্গে গুড় ওসুন্নতি  মধু মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়ে যায়।


সুন্নতি  বড়ই গাছের ছাল চূর্ণের সঙ্গে সুন্নতি  মধু মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়।


৫০০ গ্রাম আতপ চাল ভেজে গুঁড়া করে এর সঙ্গে ১২৫ গ্রাম সুন্নতি  ঘি, ২৫০ গ্রাম খাটি সুন্নতি মধু,  এবং ২০টি সবরি কলা ভালোভাবে মিশিয়ে (চটকে) জ্বালাল দিয়ে খাবার উপযোগী করে ৩/৪ দিন নিয়মিত খেলে সব ধরনের আমাশয় ভালো হয়ে যায়।


১০.অন্যান্য রোগে সুন্নতি মধু


শরীরের বাইরের কোন অংশের ক্ষততে মধুর প্রলেপ লাগালে অনেক সময় মলমের চেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।


পানিতে অল্প মধু মিশিয়ে খেলে পাকস্থলীর ক্ষত সারে।


মৌরির পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে দূষিত বায়ু পেট থেকে বেরিয়ে যায়।


যারা খুব মোটা হচ্ছেন তাদের মেদ কমানোর জন্য মধুর সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে খেলে সুফল পাওয়া যায়।


দুর্বল শিশুকে এক ফোঁটা মধু দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার খাওয়ালে তার স্বাস্থ্য ভালো হয় ও শক্তি লাভ করে।


এক কাপ দুধে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে রোজ সকালে খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।


মধুর সঙ্গে গুড়ের রস মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।


চক্ষু রোগে এক ফোঁটা করে মধু দিনে ৩ বার চোখে লাগাতে হবে।


শিশুদের দৈহিক গড়ন, রুচি বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি ও পেট ভালো রাখার জন্য প্রত্যহ এক চা চামচ মধু গরম দুধ ও গরম পানির সঙ্গে নাশতা ও রাতের খাবারের সঙ্গে দিতে হবে।


আমাশয় ও পাতলা পায়খানা থাকলে গরম পানিতে আড়াই চা-চামচ মধু মিলিয়ে শরবত বানিয়ে বারবার ‘সেবন করতে হবে’।


যক্ষ্মা রোগে বাসক পাতার রস এক চা-চামচ পরিমাণ এক চা-চামচ মধু এবং এক চা-চামচ আদার রস মিশিয়ে কিছু দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।


যক্ষ্মা রোগ ভালো হওয়ার জন্য- আধাতোলা পেঁয়াজের রস, ২৫০ গ্রাম ঘি এবং ২৫০ গ্রাম মধু মিশিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিয়ে প্রতিদিন সকাল বিকাল খেলে এবং প্রতি রাতে শোয়ার সময় চিনি দিয়ে অল্প পরিমাণ গরম দুধ খেলে ৪/৫ দিনের মধ্যে যক্ষ্মা ভালো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ।


নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মধু হৃদপি-কে সতেজ করে। প্রতিদিন হাতের তালুতে অল্প পরিমাণ মধু নিয়ে চেটে খেলে হৃদরোগ থাকে না।


জার্মান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ই কচ বলেছেন, ‘উপযুক্ত ঘাস খেয়ে ঘোড়া যেমন তেজী হয় তেমনি নিয়মিত সকালে এক চা-চামচ করে খাঁটি মধু খেলে হৃদপি- শক্তিশালী হয়। এ ছাড়া মধু আয়ুও বৃদ্ধি করে।’


ডায়রিয়াতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  মধু খাওয়ানোর কথা বলছেন।


ডায়রিয়া হলে খয়ের ও দারুচিনির গুঁড়া সমপরিমাণ সামান্য মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।


পিপুল ও গোল মরিচের শুকনো গুঁড়ার সঙ্গে মধু মিশিয়ে কিছু দিন নিয়মিত খেলে পুরাতন উদরাময় ভালো হয়ে যায়।


কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এক গ্লাস গরম দুধ বা গরম পানিতে ২চা-চামচ মধু মিশিয়ে কয়েকবার খেতে হবে।

Post a Comment

0 Comments